Explore captivating content and diverse perspectives on our Discover page. Uncover fresh ideas and engage in meaningful conversations
Elephant Rumblings: Stephen Vogt usually takes education process with Mariners | #a
ক্ষমা চাওয়ার কিছু দুআ
--------------------
রাসূল সা:-এর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই, তাতে আমি কী (দোয়া) পড়বো?’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বলবে–
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুওউন; তুহিব্বুল ‘আফওয়া; ফা-‘ফু আন্নী।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে পছন্দ করেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন।
আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমা লাভে কুরআনুল কারিমে তিনি বান্দার জন্য অনেক দোয়া তুলে ধরেছেন। সেগুলো হচ্ছে–
. رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
‘রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! (আমাকে) ক্ষমা করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ রহমকারী।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১১৮)
. رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ
‘রাব্বানা আমান্না ফাগফিরলানা ওয়ারহামনা ওয়া আনতা খাইরুর রাহিমীন।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদের প্রতি রহম করুন। আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়াবান। (সূরা মুমিনুন : আয়াত ১০৯)
. رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
‘রাব্বি ইন্নী জালামতু নাফসি ফাগফিরলি।’
অর্থ : (হে আমার) প্রভু! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। (সূরা কাসাস : আয়াত ১৬)
. رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
‘রাব্বানা ইন্নানা আমান্না ফাগফিরলানা জুনূবানা ওয়া ক্বিনা আজাবান-নার।’
অর্থ : হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং আপনি আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৬)
. رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
‘রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরীন।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।’ (সূরা আরাফ : আয়াত ২৩)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
‘রাব্বানাগফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়্যা ওয়া লিলমুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার বাবা-মাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন। (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৪১)
. سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
‘সামি‘না ওয়া আত্বা‘না গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাছির।’
অর্থ : আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে। (সূরা আল-বাকারাহ : আয়াত ২৮৫)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
‘রাব্বানাগফিরলানা ওয়াল ইখওয়ানিনাল্লাজিনা সাবাকুনা বিল ঈমান।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের ক্ষমা করুন এবং আমাদের আগে যারা ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন। (সুরা হাশর : আয়াত ১০)
. رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
‘রাব্বানাগফিরলানা জুনূবানা ওয়া ইসরাফানা ফী আমরিনা ওয়া ছাব্বিত আক্বদামানা ওয়ানছুরনা ‘আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে আপনার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দিন। আমাদের কদমকে অবিচল রাখুন এবং অবিশ্বাসীদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৪৭)
. رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
‘রাব্বানা ফাগফিরলানা জুনূবানা ওয়া কাফফির আন্না সায়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফফানা মাআল আবরার।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের ভুলগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ১৯৩)
এছাড়া রাসূল সা: ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আল্লাহর কাছে যেসব দু‘আ করেছেন এবং আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ একটি দু‘আ রয়েছে, যাকে হাদীসে বলা হয়েছে– ‘সাইয়িদুল ইসতিগফার’ বা ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু‘আ। সাইয়িদ মানে নেতা বা সরদার। এ দু‘আকে বলা হয়েছে গুনাহমাফির দু‘আসমূহের সরদার। দু‘আটি হলো–
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُك وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা; খালাকতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত‘তু; ‘আউযুবিকা মিন শার্রি মা ছা‘নাতু আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা ওয়া আবূউ বিযামবী, ফাগফির্ লী, ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনার গোলাম; আমি আপনার হেদায়াতের পথে চলছি এবং সাধ্যমত আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকার পালনে সচেষ্ট রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছেন, সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করে নিচ্ছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া গুনাহ মাফ করার কেউ নেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়িদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে, ওই দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে। এবং যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে রাতে এ দু‘আ পাঠ করবে, ওই রাতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’ [সহীহুল বুখারী]
প্রতিটি দুয়া হৃদয়ের গহীন থেকে যত বেশি সংখ্যকবার সম্ভব পড়তে থাকুন। কেঁদে কেঁদে পড়ুন। আরবি না পারলে শুধু বাংলা অর্থ পড়ুন।
নোংরা অন্তরকে কিভাবে পরিষ্কার করবেন?
------------------------------------------
আমি বলি অন্তর হলো স্ফটিক ফুলদানির মত। স্বচ্ছ ফুলদানি, ঝকঝকে সুন্দর। আল্লাহ একে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহু নু-রুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ। এর কি হয় যখন আমরা দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে থাকি? এটি ধোঁয়াটে হয়ে পড়ে। কিছুটা ময়লা পড়ে যায়। দিন দিন আরো মলিন হতে থাকে। আরো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো একেবারে কালো হয়ে যায়।
এ ময়লাটা আসলে কী? রাগ, হিংসা, মিথ্যা, দুনিয়াপ্রীতি, অনুরাগ, প্রতিযোগিতা, আমি সবার সেরা হতে চাই। আমি তাদের ধ্বংস করে ছাড়বো। ব্যবসা। এ সবকিছু। পরনিন্দা।পাপসমূহ। পাপসমূহ এর উপর ঝেঁকে বসে।
এখন, পরিশুদ্ধি কী করে? এটি একটি প্রক্রিয়া। মূলতঃ সহজ করে বলছি, সেই স্বচ্ছ ফুলদানিটি সময়ের পরিক্রমায় ময়লাযুক্ত হয়ে পড়লো। আবরণযুক্ত হয়ে পড়লো। আর যখন একে পরিষ্কার করছেন? একে পালিশ করছেন? তখন এটি আবার আগের মত স্বচ্ছ হয়ে যায়।
ফোকাস হলো- আমি এই দুনিয়াতে এসেছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার খলিফা হিসেবে। প্রতিনিধি হিসেবে। বর্তমানে আমরা সবাই এটা নিয়ে কথা বলছি। কিভাবে? এখানেও মেডিসিনের কথা আসে। সুবহানাল্লাহ।
আপনার শরীরে যদি কোনো ক্ষত থাকে। আর ক্ষতটিতে ইনফেকশন হয়ে গেছে। যে কোনো ধরণের ক্ষত। সবার আগে কী করেন? ক্ষতটি পরিষ্কার করেন। এরপর ক্ষতটির আশে পাশের সবকিছু মুছে ফেলেন, যা ক্ষতটিকে আবার সংক্রমিত করতে পারে। এরপর আপনি এমন কিছু প্ৰয়োগ করেন যা ক্ষতটিকে ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।
এর নামই হলো তাজকিয়া। পরিশুদ্ধি। আপনি আবার অন্তরের সুস্থতা ফিরিয়ে আনছেন। অন্তর আজ ক্ষতবিক্ষত। হিংসা, গীবত, ঘৃণা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসহীনত সবকিছু। ঠিক না?
এখন আমি ক্রমান্বয়ে এগুলো দূর করতে থাকবো। দূর করবো। ক্ষতিকর উপাদান দূর করবো। পাপসমূহ দূর করবো। অর্থাৎ, পরিষ্কার করবো।
আমি বোনদের সবসময় বলি। মানে, প্লেট গ্লাস পরিষ্কার করার মতো। এখানে প্লেট হলো আপনার হার্ট। আপনি একে ধৌত করছেন। পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ধুতে থাকবেন। ঠিক না?
ব্যাপারটা এমনই।
প্রসঙ্গত, অন্তরের পরিশুদ্ধি অর্থ্যাৎ তাজকিয়া হলো তিনটি মেসেজের একটি যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি প্রেরণ করেছেন, আমাদের জন্য।
প্রথমটা হলো... সূরাতুল বাকারায় এসেছে (ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ) رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ -
- এটা ছিল ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ। সাইয়িদিনা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ। সূরাতুল বাকারায়।
হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে।
এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তিনটি কাজ করবেনঃ
১. তাদের নিকট আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন।
২. তাদেরকে কিতাব ও হিকমত অর্থাৎ সুন্নাহ শিক্ষা দিবেন।
৩. এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। এটাই হলো অন্তরের পরিশুদ্ধি। তাজকিয়া।
এই এ কথাগুলো কুরআনে চারবার এসেছে। আপনি যদি সূরাতুল বাকারার সাথে তুলনা করেন সুরাতুল জুমুয়ায় দেখবেন এ কথাগুলোর ক্রম পরিবর্তিত হয়ে গেছে। هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ - তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রসূলকে তাদেরই মধ্য হতে, যে তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে, আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় অথচ ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত। (৬২:২)
এখন দেখুন পবিত্র করার কথা দ্বিতীয়বারে এসেছে। অর্থাৎ আপনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, মুসলিম হয়ে যান, তখন তাজকিয়া হয়ে যায় কোনো কোনো স্কলারের মতে ফরদে আইন। প্রতিটি ব্যক্তির উপর ফরজ হয়ে যায়।
এখন, অল্প কথায় বলছি কিভাবে আমি এটি অর্জন করবো? তার আগে একটি কথা বলে রাখি এটি একটি প্রসেস। একটি প্রক্রিয়া। একদিনে এটি সম্ভব হবে না।
আচ্ছা। এক নাম্বারঃ আপনার সমস্যা খুঁজে বের করুন। আমার সমস্যা কী? আমার সমস্যা রাগ। আমি যখন রেগে যাই, আমি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পড়ি। আমি খারাপ কথা বলে ফেলি। মানুষকে কষ্ট দেই।
অন্য আরেকজন বলতে পারে, আচ্ছা আমার সমস্যা কী? হিংসা। তার কেন এটা থাকবে আমার তো নেই। সে তো এটা পাওয়ার যোগ্য না।
কেউ কেউ বলবে, আমার সমস্যা হলো আমি যখন মুখ খুলি মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। গীবত, মিথ্যা, মানুষকে অপমান করা, টিটকারি করা এ ধরেনর সবকিছু।
তাহলে এক নাম্বার বিষয় হলো আপনার সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। এরপর একটি একটি করে ধৌত করতে থাকুন। মুছে ফেলুন নিজের জীবন থেকে।
সহজ একটি সমাধান হলো ভাল মানুষদের সঙ্গ।
আমি জানি আমি যদি ওদের সাথে যাই আমি মানুষের গীবত করবো। আমি যদি ঐ মহিলার বাড়িতে যাই, আমি অন্তরে হিংসা অনুভব করব। তার আছে চার বেড রুমের বাসা। আর আমারটা তিন রুমের। তাই, আমাকে এসব সামাজিকতা বাদ দিতে হবে।
দ্বিতীয় সমাধানঃ মুজাহাদা বা প্রচেষ্টা, সাধনা। প্রসেসটা খুবই সহজ। চারটি জিনিস আপনাকে কমাতে হবে আর একটি জিনিস বাড়াতে হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়েম খুবই সন্দর করে এটি তুলে ধরেছেন।
যে চারটি জিনিস কমাতে হবে। ১। কথা বলা কমাতে হবে। ২। ঘুম কমাতে হবে। ৩। আহার কমাতে হবে। এবং ৪। মানুষের সাথে আড্ডা, গল্পগুজব কমাতে হবে।
আর যে একটি জিনিসটি বাড়াতে হবে তাহলো আল্লাহর জিকির। এটি একেবারে তাজকিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর। একটি কথা আছে যা রাসূলুল্লাহ (স) এর প্রতি আরোপ করা হয়। কথাটি হলো- وإن سقالة القلوب ذكر الله - নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকির অন্তরের পরিষ্কারক।
মনে আছে? আমি যে শুরুতে স্বচ্ছ ফুলদানির কথা বলেছিলাম? সাবান পানি দিয়ে যেভাবে ফুলদানি পরিষ্কার করেন ঠিক তদ্রূপ আল্লাহর স্মরণ দ্বারা অন্তর পরিষ্কার করবেন।
এখন জিকির বলতে কী বুঝায়? জিকির মানে আল্লাহর স্মরণ। যে কোনো ধরণের স্মরণ। নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, মুখস্ত করা। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। সকাল সন্ধ্যার জিকির আজকারগুলো করা। সুবহানাল্লাহ বলা। প্রকৃতি দেখা এবং সেজন্য আল্লাহর তারিফ করা। এভাবে বলা- ইয়া আল্লাহ! কতইনা সুন্দর করে আপনি এসব সৃষ্টি করেছেন! এর নাম জিকির। দোয়া করাও জিকির।
(শায়েখ ইয়াসির কাদি বলেছেন, সেরা জিকির চারটি। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।)
আর এটা একদিন দুইদিন করলে হবে না। এটা একটা প্রক্রিয়া। নিয়মিত করবেন। তখন ধীরে ধীরে নিজের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। এখন অনেক প্রশান্তি অনুভব করেন। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ থাকেন। এখন আর আগের মত অভিযোগ করেন না। বস্তুগত জিনিসের প্রতি পূর্বের মত অনুরাগ অনুভব করেন না। জিনিসটা যদি থাকে আলহামদুলিল্লাহ্। যদি না থাকে তবু আলহামদুলিল্লাহ্।
এরকম অবস্থায় যখন পৌঁছবেন তখন আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে শুরু করবেন। কুরআন পড়ার সময় চোখ দিয়ে এমনিতেই অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। নামাজ পড়তে ভালো লাগবে। তাহাজ্জুদ পড়তে কষ্ট লাগবে না।
আমি সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করি এবং আমি বুঝতে পারি সমগ্র দুনিয়াজুড়ে মানুষ আজ এগুলোর অভাব ফিল করছে। আমি তখন উপলব্ধি করি, আমাকে এগুলো বেশি বেশি শেখাতে হবে।
- ডাক্তার হাইফা ইউনিস
- ইরাকি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ডাক্তার।
- তিনি সৌদি আরবে গিয়ে কুরআন মুখস্ত করেন এবং ইসলামিক স্টাডিজে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন।
- অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলেমা। মুসলিম মহিলা স্কলার।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যখন অপরাধীদের আগুনে নিক্ষেপ করবেন তিনি বলবেন- ইখসাউ ফিইহা ওয়ালা তুকাল্লিমুন- اخۡسَـُٔوۡا فِیۡهَا وَ لَا تُکَلِّمُوۡنِ - ‘তোমরা ধিকৃত অবস্থায় এখানেই পড়ে থাক, আমার সঙ্গে কোন কথা বল না।’ (২৩:১০৮)
তাদের আল্লাহর সাথে কথা বলার আর সুযোগ থাকবে না। কুরআনে দেখবেন অধিকাংশ সময় আগুনের অধিবাসীরা আল্লাহর সাথে কথা বলে না। তারা কথা বলে জাহান্নামের রক্ষকদের সাথে।
তারা জাহান্নামের ফেরেশতা মালেককে বলবে, ও মালেক! আপনার রবকে বলুন আমাদের শাস্তি শুধু এক দিনের জন্য কমিয়ে দিতে। এমনকি শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার কথাও তারা সরাসরি আল্লাহকে বলতে পারবে না। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এমনকি তাঁকে ডাকার ক্ষমতাও তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিবেন।
এই দুনিয়াতে সবার চান্স্ আছে তাঁর নিকট সরাসরি কিছু চাওয়ার। যদি আপনি এখন এই দুনিয়াতে এ সুযোগ মিস করেন, তাঁর কাছে চাওয়ার এই সুযোগ, তবে পরকালে তাঁর নিকট চাওয়ার সুযোগ থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।
(তাই তাঁর নিকট বেশি বেশি মাফ চান, নিজের ভাষাতেই কাকুতি-মিনতি করে মাফ চান। জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত চান এবং জান্নাত চান। আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকাল জান্নাতা ওয়া আউজুবিকা মিনান নার। অর্থাৎ ও আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই আর জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।)
কারণ, এই জগতে তারা আল্লাহর কাছে সরাসরি চায় নি। পরের জগতে তাদেরকে আর সুযোগ দেওয়া হবে না। তাদের বলে দেওয়া হবে আমার সঙ্গে কোন কথা বল না।’ দোজখের অধিবাসীরা তখন শুধু আগুনের ফেরেশতা মালেককে বলতে পারবে। কিন্তু, উনি তাদের পক্ষ হয়ে আল্লাহর কাছে এমনিতেই কিছু চাইবেন না।
তাই, আমি বলতে চাচ্ছি, কুরআন আসলেই এসেছে একটি করুণা হিসেবে। বিষয়টা এতোই ভয়াবহ যে কারো পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
সেদিন আসার পূর্বে এখন আপনার হাতে সময় আছে। যারা ইতোমধ্যে মারা গেছে চিরকালের জন্য তাদের সে সুযোগ চলে গেছে। কিন্তু, আমাদের হাতে এখনো সময় আছে।
তাই, কুরআন মানবতার জন্যে একটি মার্সি, একটি করুণা। এজন্য আল্লাহ বলেছেন- আর রাহমান, আল্লামাল কুরআন। পরম করুনাময়, যিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে একটি দয়া হিসেবে আমাদের কাছে এসেছে। এটি মানুষকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে, মারা যাওয়ার পূর্বে তোমার হাতে এখনো সুযোগ আছে। মৃত্যুর পরে আর কোনো সুযোগ নেই।
- ড. আকরাম নদভী
- deepdeentv, surah Insan, part 01