নোংরা অন্তরকে কিভাবে পরিষ্কার করবেন?
------------------------------------------
আমি বলি অন্তর হলো স্ফটিক ফুলদানির মত। স্বচ্ছ ফুলদানি, ঝকঝকে সুন্দর। আল্লাহ একে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহু নু-রুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ। এর কি হয় যখন আমরা দৈনন্দিন জীবন যাপন করতে থাকি? এটি ধোঁয়াটে হয়ে পড়ে। কিছুটা ময়লা পড়ে যায়। দিন দিন  আরো মলিন হতে থাকে। আরো অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো একেবারে কালো হয়ে যায়।

এ ময়লাটা আসলে কী? রাগ, হিংসা, মিথ্যা, দুনিয়াপ্রীতি, অনুরাগ, প্রতিযোগিতা, আমি সবার সেরা হতে চাই। আমি তাদের ধ্বংস করে ছাড়বো। ব্যবসা। এ সবকিছু। পরনিন্দা।পাপসমূহ। পাপসমূহ এর উপর ঝেঁকে বসে।

এখন, পরিশুদ্ধি কী করে? এটি একটি প্রক্রিয়া। মূলতঃ সহজ করে বলছি, সেই স্বচ্ছ ফুলদানিটি সময়ের পরিক্রমায় ময়লাযুক্ত হয়ে পড়লো। আবরণযুক্ত হয়ে পড়লো। আর যখন একে পরিষ্কার করছেন? একে পালিশ করছেন? তখন এটি আবার আগের মত স্বচ্ছ হয়ে যায়।
ফোকাস হলো- আমি এই দুনিয়াতে এসেছি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার  খলিফা হিসেবে। প্রতিনিধি হিসেবে। বর্তমানে আমরা সবাই এটা নিয়ে কথা বলছি। কিভাবে? এখানেও মেডিসিনের কথা আসে। সুবহানাল্লাহ।

আপনার শরীরে যদি কোনো ক্ষত থাকে। আর ক্ষতটিতে ইনফেকশন হয়ে গেছে। যে কোনো ধরণের ক্ষত। সবার আগে কী করেন? ক্ষতটি পরিষ্কার করেন। এরপর ক্ষতটির আশে পাশের সবকিছু মুছে ফেলেন, যা ক্ষতটিকে আবার সংক্রমিত করতে পারে। এরপর আপনি এমন কিছু প্ৰয়োগ করেন যা ক্ষতটিকে ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।

এর নামই হলো তাজকিয়া। পরিশুদ্ধি। আপনি আবার অন্তরের সুস্থতা ফিরিয়ে আনছেন। অন্তর আজ ক্ষতবিক্ষত। হিংসা, গীবত, ঘৃণা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসহীনত সবকিছু। ঠিক না?

এখন আমি ক্রমান্বয়ে এগুলো দূর করতে থাকবো। দূর করবো। ক্ষতিকর উপাদান দূর করবো। পাপসমূহ দূর করবো। অর্থাৎ, পরিষ্কার করবো।
আমি বোনদের সবসময় বলি। মানে, প্লেট গ্লাস পরিষ্কার করার মতো। এখানে প্লেট হলো আপনার হার্ট। আপনি একে ধৌত করছেন। পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ধুতে থাকবেন। ঠিক না?
ব্যাপারটা এমনই।

প্রসঙ্গত, অন্তরের পরিশুদ্ধি অর্থ্যাৎ তাজকিয়া হলো তিনটি মেসেজের একটি যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা রাসূলুল্লাহ (স) প্রতি প্রেরণ করেছেন, আমাদের জন্য। 

প্রথমটা হলো... সূরাতুল বাকারায় এসেছে (ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ)  رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِکَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ -
- এটা ছিল ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ। সাইয়িদিনা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোআ। সূরাতুল বাকারায়।
হে আমাদের রব, তাদের মধ্যে তাদের থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যে তাদের প্রতি আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবে আর তাদেরকে পবিত্র করবে।

এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তিনটি কাজ করবেনঃ
১. তাদের নিকট আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন।
২. তাদেরকে কিতাব ও হিকমত অর্থাৎ সুন্নাহ শিক্ষা দিবেন।
৩. এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। এটাই হলো অন্তরের পরিশুদ্ধি। তাজকিয়া।

এই এ কথাগুলো কুরআনে চারবার এসেছে। আপনি যদি সূরাতুল বাকারার সাথে তুলনা করেন সুরাতুল জুমুয়ায় দেখবেন এ কথাগুলোর ক্রম পরিবর্তিত হয়ে গেছে। هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَکِّیۡهِمۡ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ - তিনিই নিরক্ষরদের মাঝে পাঠিয়েছেন তাঁর রসূলকে তাদেরই মধ্য হতে, যে তাদের কাছে আল্লাহর আয়াত পাঠ করে, তাদেরকে পবিত্র করে, আর তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় অথচ ইতোপূর্বে তারা ছিল স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত। (৬২:২)

এখন দেখুন পবিত্র করার কথা দ্বিতীয়বারে এসেছে। অর্থাৎ আপনি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, মুসলিম হয়ে যান, তখন তাজকিয়া হয়ে যায় কোনো কোনো স্কলারের মতে ফরদে আইন। প্রতিটি ব্যক্তির উপর ফরজ হয়ে যায়।

এখন, অল্প কথায় বলছি কিভাবে আমি এটি অর্জন করবো? তার আগে একটি কথা বলে রাখি এটি একটি প্রসেস। একটি প্রক্রিয়া। একদিনে এটি সম্ভব হবে না।

আচ্ছা। এক নাম্বারঃ আপনার সমস্যা খুঁজে বের করুন। আমার সমস্যা কী? আমার সমস্যা রাগ। আমি যখন রেগে যাই, আমি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পড়ি। আমি খারাপ কথা বলে ফেলি। মানুষকে কষ্ট দেই।

অন্য আরেকজন বলতে পারে, আচ্ছা আমার সমস্যা কী? হিংসা। তার কেন এটা থাকবে আমার তো নেই। সে তো এটা পাওয়ার যোগ্য না।
কেউ কেউ বলবে, আমার সমস্যা হলো আমি যখন মুখ খুলি মানুষকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। গীবত, মিথ্যা, মানুষকে অপমান করা, টিটকারি করা এ ধরেনর সবকিছু।

তাহলে এক নাম্বার বিষয় হলো আপনার সমস্যাগুলো শনাক্ত করুন। এরপর একটি একটি করে ধৌত করতে থাকুন। মুছে ফেলুন নিজের জীবন থেকে।

সহজ একটি সমাধান হলো ভাল মানুষদের সঙ্গ।

আমি জানি আমি যদি ওদের সাথে যাই আমি মানুষের গীবত করবো। আমি যদি ঐ মহিলার বাড়িতে যাই, আমি অন্তরে হিংসা অনুভব করব। তার আছে চার বেড রুমের বাসা। আর আমারটা তিন রুমের। তাই, আমাকে এসব সামাজিকতা বাদ দিতে হবে।

দ্বিতীয় সমাধানঃ মুজাহাদা বা প্রচেষ্টা, সাধনা। প্রসেসটা খুবই সহজ। চারটি জিনিস আপনাকে কমাতে হবে আর একটি জিনিস বাড়াতে হবে। ইমাম ইবনুল কাইয়েম খুবই সন্দর করে এটি তুলে ধরেছেন।

যে চারটি জিনিস কমাতে হবে। ১। কথা বলা কমাতে হবে। ২। ঘুম কমাতে হবে। ৩। আহার কমাতে হবে। এবং ৪। মানুষের সাথে আড্ডা, গল্পগুজব কমাতে হবে।

আর যে একটি জিনিসটি বাড়াতে হবে তাহলো আল্লাহর জিকির। এটি একেবারে তাজকিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর। একটি কথা আছে যা রাসূলুল্লাহ (স) এর প্রতি আরোপ করা হয়। কথাটি হলো-  وإن سقالة القلوب ذكر الله - নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকির অন্তরের পরিষ্কারক।
মনে আছে? আমি যে শুরুতে স্বচ্ছ ফুলদানির কথা বলেছিলাম? সাবান পানি দিয়ে যেভাবে ফুলদানি পরিষ্কার করেন ঠিক তদ্রূপ আল্লাহর স্মরণ দ্বারা অন্তর পরিষ্কার করবেন।

এখন জিকির বলতে কী বুঝায়? জিকির মানে আল্লাহর স্মরণ। যে কোনো ধরণের স্মরণ। নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, মুখস্ত করা। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। সকাল সন্ধ্যার জিকির আজকারগুলো করা। সুবহানাল্লাহ বলা। প্রকৃতি দেখা এবং সেজন্য আল্লাহর তারিফ করা। এভাবে বলা- ইয়া আল্লাহ! কতইনা সুন্দর করে আপনি এসব সৃষ্টি করেছেন! এর নাম জিকির। দোয়া করাও জিকির।

(শায়েখ ইয়াসির কাদি বলেছেন, সেরা জিকির চারটি। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।)

আর এটা একদিন দুইদিন করলে হবে না। এটা একটা প্রক্রিয়া। নিয়মিত করবেন। তখন ধীরে ধীরে নিজের মাঝে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। এখন অনেক প্রশান্তি অনুভব করেন। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ থাকেন। এখন আর আগের মত অভিযোগ করেন না। বস্তুগত জিনিসের প্রতি পূর্বের মত অনুরাগ অনুভব করেন না। জিনিসটা যদি থাকে আলহামদুলিল্লাহ্‌। যদি না থাকে তবু আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এরকম অবস্থায় যখন পৌঁছবেন তখন আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে শুরু করবেন। কুরআন পড়ার সময় চোখ দিয়ে এমনিতেই অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। নামাজ পড়তে ভালো লাগবে। তাহাজ্জুদ পড়তে কষ্ট লাগবে না।

আমি সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করি এবং আমি বুঝতে পারি সমগ্র দুনিয়াজুড়ে মানুষ আজ এগুলোর অভাব ফিল করছে। আমি তখন উপলব্ধি করি, আমাকে এগুলো বেশি বেশি শেখাতে হবে।

- ডাক্তার হাইফা ইউনিস
- ইরাকি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ডাক্তার।
- তিনি সৌদি আরবে গিয়ে কুরআন মুখস্ত করেন এবং ইসলামিক স্টাডিজে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন।
- অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন আলেমা। মুসলিম মহিলা স্কলার।